মো: লুৎফুল হাসান রানা, কলাপাড়া প্রতিনিধি ॥ কলাপাড়া সদর থেকে কুয়াকাটাগামী সড়কের ১৮কিলোমিটার দক্ষিনে মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ। সেখান থেকে উত্তরে প্রায় দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তা পেড়িয়ে গেলে সুধিরপুর গ্রাম। গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আন্ধারমানিক নদী। নদীর অপর পাড়ে সুন্দর বনের পূর্ব প্রান্ত টেংগাগিরি বন। সাগর মোহনা হওয়ার কারনে ঢেউয়ের ঝাপটা লাগে সুধিরপুর ছাড়াও পাশ্ববর্তী কমরপুর ও নিজামপুর গ্রামে। বছরের পর বছর নদী ভাঙ্গনে চললেও স্থায়ী বেড়িবাঁধ তৈরি হচ্ছেনা। এবার ঘূর্ণিঝড়েও ব্যতিক্রম হয়নি। তাই নদীর পাড়ের মানুষের দাবি ত্রান চাই না। চাই টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ। সরেজমিনে এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অনেক কথা। কয়েক বছর আগেই আন্ধারমানিক নদীর মোহনায় পরেছে বিশাল আকৃতির ডুবো চর। এই চরটি কুয়াকাটার সর্ব পশ্চিমে খাজুরা বন সংলগ্ন এলাকায়। সরকার রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে চরটি বালু ব্যবসায়ীদের কাছে লিজ দিয়ে দেয়। এতেই বাধে বিপত্তি। অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ঐ খাজুরা পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন ছাড়াও কমরপুর, সুধিরপুর ও নিজামপুর গ্রাম সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর মাঝে জেগে ওঠা ডুবো চরের বালুও কাটতে থাকে। এতেই বেড়ে যায় ভাঙ্গন। বছরের পর বছর এভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা একদিকে বেড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ভাঙ্গনও বেড়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ এলাকার মানুষ থাকে আতঙ্কে। ফসল ভেসে যায়। ভেসে যায় গবাদি পশু। এমনকি বসতবাড়িও। নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা মালেক ফরাজী বলেন, নিজামপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ মেরামতের নামে বিগত দশ বছরে যে পরিমান সরকারি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে গোটা মহিপুর ইউনিয়নের টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান করা সম্ভব হতো। সুধীরপুর গ্রামের বাসিন্ধা সাবেক ইউপি মেম্বার ইসমাইল হাওলাদার বলেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পর স্থানীয় এমপিরা ভাঙ্গা বাঁধ পরিদর্শনে আসেন ১০/১৫ প্যাকেট ত্রান নিয়ে। আর প্রতিশ্রুতি দেন স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান করার। এর কিছুদিন পরে ভূলে যান সবকিছূ। আর দূর্ভোগ পোহাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ঢের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এস ডি) শওকত ইকবাল মেহেরাজ বলেন, নিজামপুর গ্রামের এই পয়েন্টের বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য সরকার টেন্ডার আহ্বান করেছিল। সে অনুসারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ার্ক অর্ডারও দেয়া হয়েছিল। সেই সময় ঠিকাদার কাজ করলে আজ এই বিপর্যয় ঘটতো না। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর ৫৪/এ পোল্ডার এলাকায় জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে, ধূলাসার ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের প্রায় একশত মিটার বিধ্বস্ত হয়েছে, মহিপুর ইউনিয়নের ৪৭/১ পোল্ডারের নিজামপুর ও কমরপুর এই দুই পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলার ৪৬নং পোল্ডারের দুইটি পয়েন্টে প্রায় একশত মিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া লালুয়র ইউনিয়নের ৪৭/৫ নং পোল্ডারের ৮ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে সাগরের পানি প্রবেশ করেছে। কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহহীন জানান, কলাপাড়া উপজেলায় মোট সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ পাঁচশত ১৫ কিলোমিটার, ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ২৩ দশমিক আট কিলোমিটার। এছাড়া কলাপাড়া উপজেলায় বেড়িবাঁধ নেই (উম্মুক্ত) ১৪ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। ঘূর্নিঝড় ইয়াসে ক্ষতির পরিমান প্রায় তিন কিলোমিটার। বর্তমানে লালুয়ার ইউনিয়নের ৪৭/৫নং পোল্ডারের ৮ কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধটি পায়রা পোর্ট কতৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই অংশটুকুর মেরামতের দ্বায়িত্ব তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ জরুরী ভিক্তিতে সংস্কারের জন্য আমরা ব্যাবস্থা গ্রহন করছি। স্থায়ী সংস্করের জন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে।
Leave a Reply